পক্ষপাতিত্ব অর্থ নিজ স্বার্থ হাসিল, অন্যের বড় ক্ষতি!

পক্ষপাতিত্ব অর্থ নিজ স্বার্থ হাসিল, অন্যের বড় ক্ষতি!

পক্ষপাতিত্ব বা এক চোখা নীতি আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। এ প্রভাব কারও ক্ষেত্রে খুব বেশী আবার কারও বেলায় খুব কম। পক্ষপাতিত্ব আসলে স্বজনপ্রীতি ও দুর্ণীতির অন্য রুপ। পক্ষপাতিত্ব এর ফলে আমাদের জীবনে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং আমরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছি। একচোখা নীতি, ন্যায় বিচার ও সার্বজনীন কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। আমাদের সমাজে অনেকেই খুব গর্ব করে বলেন, আমার মধ্যে কোন স্বজনপ্রীতি নাই। এটা আসলে মিথ্যা কথা। কারণ সবার মধ্যেই পক্ষপাতিত্ব বা স্বজনপ্রীতি, দুর্ণীতি অথবা স্বার্থপরতা খুব সুক্ষ্ম হলেও বিদ্যমান। যতই বলি না কেন, এ পৃথিবীতে আমরা কেউই স্বার্থের উর্ধ্বে নই। বিভিন্ন উদাহরণে বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টাই আমার লেখার মুল উদ্দেশ্য।

পক্ষপাতিত্ব অর্থ নিজ স্বার্থ হাসিল, অন্যের বড় ক্ষতি!

মায়ের কাছে তার সব সন্তানই সমান। কোন মায়ের দুটো সন্তান আছে। একজন পড়ালেখায় খুবই তুখোড়, অন্য জন পড়ালেখায় খুবই সাধারণ। যে ছেলেটি পড়াশুনায় খুব ভালো তার জন্য মা সব কিছুতেই একটু বেশী ছাড় দেয়। এই এক সন্তানের জন্য বেশী ছাড় দেয়াটা একটি সুক্ষ্ম পক্ষপাতিত্ব। এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর বাড়ীর নিকটে একজন কৃষক বাস করে। পাশের গ্রামে আরও একজন হতদরিদ্র কৃষক বাস করে। সরকারের পক্ষ থেকে সব গরীবদের ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। ত্রাণের শেষ একটি ছাগল, চেয়ারম্যান বাড়ীর নিকটের কৃষককে দিল এবং পাশের গ্রামের দরিদ্র কৃষককে, নেই বলে ফিরিয়ে দিলেন। ত্রাণটি এই কৃষকের প্রাপ্য ছিল কিন্তু চেয়ারম্যান পক্ষপাতিত্ব করে অন্য কৃষককে দিলেন।

যদি চেয়ারম্যান সঠিক বিবেচনা করতো তবে অনুদানটি পাশের গ্রামের হতদরিদ্র ব্যক্তির কপালে জুটতো। এক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর জন্য একজন লোক নিয়োগ দেয়া হবে। সেখানে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট করা দু জনকে বেছে নেয়া হলো। যে ভালো ফলাফল করেছে, তার সাথে ঐ প্রতিষ্ঠানের কোন সম্পর্ক নেই। অন্য জন প্রতিষ্ঠানের এমডির আত্মীয়। এখানে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এমডির আত্মীয়কে নিয়োগ দেয়া হলো। এখানে প্রথম স্থান অধিকারী ছেলেটি, কর্মকর্তার পক্ষপাতিত্ব বা স্বজনপ্রীতি বা এক চোখা নীতি অথবা দুর্ণীতির কাছে পরাজিত হয়েছ। প্রথম স্থান অধিকারী ছেলেটির এবং তার পরিবারের জন্য চাকুরীটির দরকার ছিল। চাকুরীর পক্ষপাতিত্ব তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

পক্ষপাতিত্ব অর্থ নিজ স্বার্থ হাসিল, অন্যের বড় ক্ষতি!

আমাদের দেশে বেকারত্বের হার বেশী। কিন্তু স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম তুলনামুলক ভাবে কম। তার মানে আমরা চাইলে অতি সহজেই ভালো জীবন যাপন করতে পারি। কিন্তু এ জীবন যাপনের প্রতিবন্ধকতা হলো পক্ষপাতিত্ব। কর্মক্ষেত্র বিচারে দেখা যাবে, কর্ম সংস্থানে সঠিক লোকটি সঠিক জায়গায় নেই। এর বড় কারণ হলো, স্বজনপ্রীতি ও দুর্ণীতি। পক্ষপাতিত্ব করে প্রায় সব স্থানে মেধাশুন্য এবং অযোগ্য লোককে বসানো হয়। ফলে তাদের মধ্যে কর্ম দক্ষতার পরিবর্তে অন্য কোন ভাবে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা থাকে। অসৎ ভাবে কেউ কোন আসনে বসলে তার সকল কাজই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তার মধ্যে অপকর্মে যুক্ত হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

অন্য দিকে যে ব্যক্তিটির যোগ্যতা বলে ভালো অবস্থানে থাকার কথা ছিল। সেই ব্যক্তিটি যথাযথ মুল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। শিক্ষা, পরিশ্রম এবং যোগ্যাতার প্রতি তার অশ্রদ্ধা চলে আসে। তার জীবন এবং পরিবারের মাঝে গড়ে ওঠা স্বপ্ন ধ্বংস হয়। একই সাথে একটি সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবার সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ভেঙ্গে তছনছ হয় আগামীর অনাবিল ও সুন্দর ভবিষ্যত। তার মানে, পক্ষপাতিত্ব বা এক চোখা নীতির প্রভাবে নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনে জটিলতা আসে। পক্ষপাতিত্বের কারণে অনেক মানুষের ভালো ভাবে বাঁচার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। আক্ষেপের বিষয় হলো, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি বা স্বার্থের কারণে একটি পরিবার পুরোপুরি ধ্বংস হয়।

পক্ষপাতিত্ব অর্থ নিজ স্বার্থ হাসিল, অন্যের বড় ক্ষতি!

সকল কাজ ও কর্মক্ষেত্রে চাচা, মামা, খালু, স্বজনপ্রীতি, স্বার্থ এবং অর্থের প্রভাব বাদ দেয়া উচিত। পক্ষপাতিত্ব ছেড়ে সঠিক মুল্যায়নের মাধ্যমে যোগ্য মানুষটির যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত জায়গা বা আসনে থাকা প্রয়োজন। তা হলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে জটিলতা বহুগুণে হ্রাস পাবে। দুর্ণীতি বা স্বজনপ্রীতি করে সাময়িক লাভের আগে, অন্যের জীবনে এর সুদূর প্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ভাবা উচিত!

Leave a Reply