মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং সন্তানদের করণীয়!

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

মা বাবার ত্যাগ এবং ভালোবাসার ফসল হলো সন্তান। তাদের ভালোবাসার জন্য আমরা এ সুন্দর পৃথিবীতে আসতে পেরেছি। আমাদের স্বচ্ছন্দে পথ চলার ক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান ভূমিকার দাবীদার পরম শ্রদ্ধেয় মা বাবা। সন্তান হিসেবে, তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে আমাদের স্মরণ করা উচিত। তাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আপনাকে আমাকে আন্তরিক হতে হবে। কিন্তু বর্তমানে তাদের জন্য, আমাদের মাঝে ঠিক কতটুকু আন্তরিকতা আছে। আমরা আন্তরিক হলে, বৃদ্ধ বয়সে মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হতো না।

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

মা এর গর্ভ ধারণের কষ্ট একটু বোঝার চেষ্টা করুন । আমাদের সবারই কম বেশী গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে। এ অসুখ হয়নি এমন মানুষ খুব কম আছেন। আশ্চর্য হবেন না, মা এর গর্ভ ধারণের সাথে গ্যাস্ট্রিকের চাপ তুলনা করছি মাত্র। যাতে নারী ও পুরুষ উভয়ই কষ্টটা বুঝতে পারেন। অতি ভোজন অথবা বদ হজম হলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং পেট ফুঁলে যায়। খুব অশান্তি বোধ করি। সাথে সাথে আরাম পাবার জন্য ঔষধ সেবন করি। এতো অল্পতেই আমাদের এমন কাহিল অবস্থা। মা তা হলে আমাদের দেহকে দশ মাস দশ দিন কতো কষ্টেই না গর্ভে ধারণ করেছেন!

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

দিনের পর দিন অনেক কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে মা নিজের দেহের ভেতর পুষ্টি দিয়ে আমাদের বড় করেছেন। তার দেহের রসে, ছোট্ট রক্ত পিন্ড থেকে আস্তে আস্তে আমরা এক পরিপুর্ণ শিশুর রুপ পেয়েছি। এমনও দিন গেছে মা আসলে কিছুই খেতে পারেননি, ঘুমাতে পারেননি। তারপরও মমতাময়ী মা আমাদের সর্বদা নিরাপদে রেখেছেন। গর্ভকালীন সময় টুকু সব সময়ই মায়েরা মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন। আপনি হাজার চেষ্টা করলেও পৃথিবীতে এমন সম্পর্ক পাবেন না। কিন্তু মমতাময়ী মা অবলীলায় সে মৃত্যু ঝুকি নিয়ে অনেকগুলো দিন পার করেন। এ গেল গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সীমাহীন কষ্ট, অবদানের কথা। সন্তান প্রসবের পরে শুরু হয় তার অন্য রকম কষ্ট ও যুদ্ধ।

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

আমি নারী নই তাই নারীর প্রসব যন্ত্রণার কষ্ট আমার পক্ষে বোঝা অসম্ভব ব্যাপার। সন্তান প্রসব যন্ত্রণা যে কত যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর তা একমাত্র মা বলতে পারবেন। অন্যদের পক্ষে এর ভয়াবহতা বোঝা অসম্ভব। অনেকেই ভাবতে পারেন, আমি হয়তো বাহবা পাবার জন্য বেশী বেশী লিখছি। কিন্তু আদৌ তা নই বরং সন্তানের জন্য স্নেহময়ী জননীর কষ্টের খুব সামান্যই তুলে ধরছি। সন্তান ভুমিষ্ঠ হবার পর প্রসব পরবর্তী সময়ের চিত্র ভাবুন। একজন মাকে তার নাজুক শরীর ও বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা নিয়ে অনেক দিন কাটাতে হয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শতকরা পঁচানব্বই জন প্রসূতি মায়েরা এ সময় অপুষ্ঠি, নিদ্রাহীনতা সহ বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হন।

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

মায়ের কষ্টের যে ছোট চিত্র তুলে ধরেছি তা অতি সামান্য সময়ের ধারণা। আমরা নবজাতক হিসেবে ভুমিষ্ঠ হবার পর শুরু হয় মাতা পিতার স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা ও ত্যাগের নতুন অধ্যায়। একটি সদ্যজাত শিশু হিসেবে আমরা কান্না ছাড়া প্রয়োজনীয়তার আর কোন ভাষা জানি না। কান্নার বহিঃপ্রকাশ এক ধরণের হলেও তার প্রয়োজনীয়তা কিন্তু ভিন্ন। আর স্নেহময়ী জননী এবং জনক ঠিকই তা বুঝতে পারেন। আমাদের কান্নার ভাষা বুঝে নিয়ে জননী স্তন্যপান করান। ভিজে অন্তর্বাস ও পোষাক পরিবর্তন করাসহ সব ধরণের প্রয়োজন পুরণ করেন। আমাদের অসুস্থতায় তাদেরকে অনেক রাতই নির্ঘুম পার করতে হয়েছে। আমাদের জন্য এমন কষ্ট কে করবে বলুন!

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

আমাদের জন্য সব সময়ই বাবা মায়ের ভালোবাসা অপরিসীম। নবজাতক থেকে শুরু মৃত্যু পর্যন্ত তারা স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া মমতা প্রদর্শন করেন। সন্তানদের ভালো এবং সুখের জন্য পিতা মাতা জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করেন। আমাদের প্রতি তাদের ভালোবাসার বর্ণনা কোন লেখাতে প্রকাশ করার মত নই। সন্তানের প্রতি পিতা মাতার স্নেহ ভালোবাসা লিখলে তা হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গল্প হয়ে যাবে। আমি সে দিকে যাচ্ছি না। আমি এ লেখাতে মায়ের মত বাবার স্নেহ, ভালোবাসা, ত্যাগ ও দায়িত্ব কিছুটা হলেও তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

সেই গর্ভকাল থেকে মা প্রচন্ড শারীরিক মানসিক কষ্ট যন্ত্রণা সয়ে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করেছেন। তার পর কোন এক শুভক্ষণে এ সুন্দর পৃথিবীতে আমাদের আগমন যেন এক ভিনগ্রহে পদার্পণ। সেই কচি চোখে অপার কৌতুহল নিয়ে অবাক হয়ে দেখেছি এ পৃথিবীকে। আমার এ ছোট্ট শরীর মাতৃদুগ্ধে একটু একটু করে পুষ্টি লাভ করেছে।

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

ছোট শিশুর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য মা যে কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন তার হিসেব নেই। না কিছু বুঝি, না কিছু বলতে পারি। ভাষা শুধুই কান্না। এতেই মা বুঝে নিতেন আমার কি প্রয়োজন। আস্তে আস্তে আমরা গড়িয়ে চলি শৈশবে। আমি কি ভাবে যে ভালো থাকবো তার চিন্তায় মা বাবার দিন কাটে না। মমতাময়ী মা ঘরে সামলান আমাদের। আর বাবা আমাদের জন্য দু বেলা মুখে দু মুঠো অন্ন জোটার সংগ্রামে ব্যস্ত।

আস্তে আস্তে আমরা শৈশব থেকে কিশোর, কিশোর থেকে যুবকে পদার্পন করি। এ মধ্যবর্তী সময়ে আমাদের মানুষ করার জন্য মা বাবাকে কত যে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তা অবর্ণনীয়। কালের আবর্তনে এক সময় আমরা কর্ম ক্ষমতার যোগ্যতা অর্জন করি। পদার্পন করি কর্ম জীবনে। মা বাবা খুশি হন আমাদের সাফল্যে। কামনা করেন আমরা যেন সব সময় ভালো থাকি। এতো কষ্ট, যন্ত্রণা, ত্যাগ এবং পরিশ্রমের পরও মা বাবা তাদের সন্তানের নিকট হতে কোন প্রতিদান কামনা করেন না। বরং তারা রঙ্গিন স্বপ্ন দেখেন, তাদের সন্তান বৈবাহিক জীবনে পদার্পন করে সুখী হবে। এ লেখা ছেলেদের ইংগিত করলেও একই কথা সমভাবে মেয়েদের বেলায়ও প্রযোজ্য।

মা-বাবার ত্যাগ সন্তানের জন্য এবং   সন্তানদের করণীয়!

মা বাবা সব সুখ স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে সারাটা জীবন সন্তান ও সংসারের ঘাঁনি টানেন। এক সময় তারা ক্লান্ত, বৃদ্ধ ও জড়াজীর্ণ হয়ে যান। মেয়েরা স্বাভাবিক ভাবে বিয়ের পর তাদের নিজ শশুড় বাড়ী, স্বামী, সন্তান ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মা বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ তাদের থাকলেও অধিকাংশ সময়ই তারা তা পালনে অক্ষম। এ ক্ষেত্রে নিরবে তাদের চোখের জল ফেলা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। কিছু মেয়ে তাদের মা বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সক্ষম হলেও তা অতি নগণ্য।

ছেলে উপার্জনক্ষম হলে সব মা বাবা তাদের সর্বশেষ অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে ছেলেকে বিয়ে দেন। আর এখানেই যত বিপত্তির শুরু। বছর ঘুরতে না ঘুরতে তাদের প্রাণ প্রিয় সন্তান মেরুদন্ডহীন জীবে পরিণত হয়। প্রায় সবাই স্ত্রীর কথায় ওঠে বসে। নিজের মা বাবার চাইতে শশুড় শাশুড়ীকে প্রাধ্যান্য দিতে শুরু করে। সন্তান হিসেবে বৃদ্ধ মা বাবার প্রতি আমরা আমাদের সামান্য দায়িত্ব টুকুও পালন করি না। আজকাল অভিজাত পরিবারগুলোতে তো বৃদ্ধ মা বাবাকে জঞ্জাল মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে সন্তানরা হাফ ছেড়ে বাঁচে। মা বাবার প্রতি সন্তান হিসেবে দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভুমিকা রাখে এমন সন্তান যে নেই তা নই। তবে তা হাতে গোনা মাত্র।

বিষয়টি একান্ত ভাবেই আপেক্ষিক এবং ব্যক্তিগত হলেও মা বাবার প্রতি আমাদের দায়ভার এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, সেবা-শশ্রুষা এবং দায়িত্ব কর্তব্য পালন আমাদের প্রত্যেকেরই একান্ত এবং প্রধান কর্তব্য। প্রকৃত পক্ষে দুনিয়া এবং আখিরাত, এ উভয় পথের পাথেয় সংগ্রহের জন্য আমাদের উচিত, পিতা-মাতাকে যথাযোগ্য, যথাসাধ্য সম্মান প্রদর্শন করা। তাদের প্রতি তেমন ভাবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা, যেমনটা তারা আমাদের শৈশব কালে করেছেন।

Leave a Reply