মুখোশ এর আড়ালে, অচেনা নগ্নতা আমাদের আসল চরিত্র!

মুখোশ এর আড়ালের রুপে অচেনা নগ্নতা যা সচরাচর মুখোশ এর আড়ালেই ঢাকা থাকে, এটিই আমাদের আসল চরিত্র। আসল চরিত্রকে ঢেকে ফেলার প্রবণতা আমাদের জন্মগত বৈশিষ্ট। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে গিরগিটির মত তার বাহিরের রুপ পরিবর্তনের ক্ষমতা না দিলেও মানুষ কৌশলে নিজের আসল চরিত্রকে ঢেকে ফেলতে পারে। ঠিক যেন, মুখোশ দিয়ে নিজের চরিত্রকে আড়াল করা। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষ দুটি রুপের অধিকারী যথাক্রমে দৈহিক ও মানসিক রুপ। আমরা দিনের বেলায়, জনসন্মুখে অথবা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের অতি ভালো মানুষ সাজি। মিষ্টি ও নীতিকথায় অন্যদের বাহবা কুড়াই। কিন্তু লোক চক্ষুর আড়ালে বা রাতের অন্ধকারে এ মুখোশ খসে পড়ে এবং চরিত্রের নগ্নতা বেড়িয়ে আসে।

মুখোশ এর আড়ালে, অচেনা নগ্নতা আমাদের আসল চরিত্র!

মুখোশ এ নিজের আসল চরিত্র ঢাকার এই যে চেষ্টা তা কিন্তু পরিবারের ক্ষেত্রে খুবই কম দেখা যায়। পরিবারের কারও মুখোশ এর আড়ালে তার পাওয়া, না পাওয়া, দীর্ঘশ্বাস এবং হতাশাই বেশী ফুটে ওঠে। পারিবারিক ভাবেও নগ্নতা দেখা যায় তবে তা খুবই কম। আসুন পরিবারে মুখোশের আড়ালে আসলে কি ঘটছে জানার এবং বোঝার চেষ্টা করি। ধরি আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জমির ফসল থেকে প্রাপ্ত সামান্য আয় দিয়ে আমাদের সংসারটা কোন রকমে চলছে। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি অথবা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারণে এবার ভালো ফসল হয়নি। সুতরাং পরিবারের দিন পার করার বিষয়টি কেমন কষ্টে চলছে আপনি বুঝতেই পারছেন!

মুখোশ এর আড়ালে, অচেনা নগ্নতা আমাদের আসল চরিত্র!

সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা। এ কারণে ফর্ম ফিলআপ ও আরও আনুসাঙ্গিক খরচ আছে। তাই স্কুলে আমাকে তিন হাজার টাকা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। বাড়ীতে বাবাকে আমার প্রয়োজনীয়তার কথা মা এর মাধ্যমে জানিয়েছি। টাকার পরিমানের কথা শুনে মা এবং বাবা দু জনেই ভিতরে ভিতরে আঁতকে উঠলেন। ভাবলেন, এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয় ছেলের ফর্ম ফিলআপের টাকা জোগার হবে কোথা থেকে! মনে মনে বাবা কিন্তু সংসারের সম্পদ গৃহপালিত একটি ছাগল বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন। অনেক আর্থিক সমস্যাতেও তারা ছাগলটি বিক্রি করেননি। কিন্তু আজ পরিস্থিতির চাপে পরে তা করতে হচ্ছে, সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে কথা তো!

মুখোশ এর আড়ালে, অচেনা নগ্নতা আমাদের আসল চরিত্র!

এখানে বাবা মার মনে ছাগল বিক্রি করা নিয়ে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আমার সামনে কিন্তু তারা নির্বিকার এবং সদা হাসি খুশি। বাবা মার মুখোশ এর আড়ালে পারিবারিক দুর্দশায় কষ্ট, হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে। একই সাথে সন্তানের প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধও ফুটে উঠেছে, কোন নগ্নতা নই। এখানে বাবা মা আমার সামনে অদৃশ্য এক মুখোশ পড়েছিলেন। যার আড়ালের চিত্র আমি দেখতে পাইনি। এবার আসি একটি দাম্পত্য জীবনে। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের বউ আপনি। গ্রাম বাংলায় যৌতুক প্রথা আজও কিন্তু আছে। আপনার পরিবারের নিকট হতে শশুড় শাশুড়ী ও স্বামীর যৌতুক পাওয়ার আশা অনেক। বিভিন্ন ভাবে তারা আপনাকে মানসিক নির্যাতন করছেন।

মুখোশ এর আড়ালে, অচেনা নগ্নতা আমাদের আসল চরিত্র!

কিন্তু আপনি নির্বিকার। তাদের কথার খোঁটা গায়ে মাখছেন না। তাদের সাথে হাসি খুশির আচরণ করছেন। আপনার মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা মাসহ সবাই তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা জেনেছেন। তারা ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড আতংকবোধ করলেও আপনার কাছে তারা কিন্তু হাসি খুশি। শত কষ্ট হলেও মেয়ের সংসার বলে কথা! তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শেষ অবলম্বণ চাষের জমির কিছু অংশ বিক্রি করবেন। অর্থ সংগ্রহ করে জামাই এর চাহিদা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে আপনি এবং আপনার পরিবার অদৃশ্য মুখোশ পড়েছেন। আপনি আপনার স্বামী সংসারের কাছে ভালো থাকার চেষ্টা করেছেন। আপনার বাবা মা আপনার কাছে হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করেছেন। এই যে প্রকৃত রূপ লুকানো, এটাই অদৃশ্য মুখোশ।

মুখোশ এর আড়ালে, অচেনা নগ্নতা আমাদের আসল চরিত্র!

কোন এক নব দম্পতির দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই চলছিল। তাদের জীবনে সুখ, শান্তি, স্বাচ্ছন্দ, প্রাপ্তি, তৃপ্তি ইত্যাদি কোন কিছুর কমতি ছিল না। স্বামী কর্মজীবি সারাদিন ঘরের বাইরে থাকে। স্ত্রী বাসায় ছোট কাজের মেয়ের সাথে সারাটা দিন একাই কাটায়। সোস্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের ফলে স্ত্রী ক্রমান্বয়ে পরকীয়াতে আসক্ত হয়ে পড়লো। সে কৌশল অবলম্বন করে দিনের বেলায় নিজের লালসা চরিতার্থ করতো। দিন শেষে বেচারা স্বামী ঘরে ফিরলে স্ত্রী অদৃশ্য মুখোশ পড়ে কি ভালো ব্যবহারটাই না করতো। এখানে মুখোশ এর আড়ালে তার নগ্নতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। একই ভাবে একজন পুরুষও পরকীয়ায় লিপ্ত হয় কিন্তু উপরে উপরে স্বাধু সন্যাসীর ভাব ধরে।

মুখোশ এর আড়ালে, অচেনা নগ্নতা আমাদের আসল চরিত্র!

বর্তমান আধুনিক যুগের প্রেম ভালোবাসা আসলে দেয়া নেয়া বা গিভ এন্ড টেক নামে পরিচিত। উপরে উপরে দুটো প্রেমিক প্রেমিকা কতো মধুর প্রেমের সম্পর্কেই না হাবুডুবু খাচ্ছে! একজনের জন্য আর একজনের কত টান, কত মায়া। দেখা না হলে একদিন বুকের ভিতর করে চিন চিন, চিন! ভাই আমরা এই যে চিত্র দেখছি তা মুখোশ এর উপরের। ভিতরের চিত্র সম্পুর্ণ আলাদা। আসল চিত্র হলো, ছেলে আছে, ছলে বলে কৌশলে মেয়েটাকে ভোগ বা নষ্ট করার চেষ্টায়। অথবা মেয়েকে পটিয়ে অন্য কোন ভাবে লাভবান হবার। এদিকে মেয়েটার প্ল্যান শুধু ছলনা করে ছেলেটাকে পটিয়ে গিফ্টের নামে তাকে চুষে খাবার। এখানে মুখোশের আড়ালে দুজনই নগ্ন মানসিকতার প্রতীক।

তবে সত্যিকারের নির্মল প্রেম বা ভালোবাসা যে নেই আমি তা বলছি না। আছে, তবে সংখ্যায় তা খুবই কম। আপনার এলাকার মাতাব্বর কোন একটা শালিশের মিমাংসার জন্য সমাজের গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে বসেছেন। বাদী আপনি বিবাদী আরেক জন। পরিস্থিতি এমন গুরুত্বর যেখানে নিশ্চিত অর্থ জরিমানা হবেই। তিনি মুখে মুখে আপনার সাফাই গাইছেন। অথচ মনে মনে চাইছেন আপনি আর্থিক চাপে পড়ুন। নিজের জমি বিক্রি করুন। তিনি যাতে তা স্বল্প মুল্যে কিনতে পারেন। এখানে মাতাব্বর মুখে মুখে আপনার ভালো চাইলেও মনে মনে আপনার আর্থিক ক্ষতি চাইছেন। তিনি আপনার কাছ হতে লাভবান হবার ফন্দিতে আছেন। এখানেই তার মুখোশ এর আড়ালে নগ্নতা।

কোন এক সমস্যায় আপনি গেলেন পরিচিত এক বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাছ। তিনি আপনাকে দেখে বেজায় খুশি এবং আপনার সমস্যা জানার পর পরামর্শ দিলেন মামলা করার। উপরে উপরে তিনি আপনার ভালো চাইছেন। আসলে তিনি এক অদৃশ্য মুখোশ পড়ে আছেন। তার মতলব হলো, পর্দার আড়ালে আপনাকে সে বিপদের মধ্যে ফেলবে। আপনার আর্থিক ক্ষতির মাধ্যমে সে লাভবান হবে। এখানে তার পরামর্শ দেয়ার চিত্র টি ধোঁকা মাত্র। তিনি তলে তলে আপনাকে বিপদে ফেলবেন। সেই সাথে ফায়দা লুটে নেয়ার যে নগ্ন পরিকল্পনা করেছেন এটি তার আসল চারিত্রিক বৈশিষ্ট।

মুখোশ এর আড়ালে, অচেনা নগ্নতা আমাদের আসল চরিত্র!

আজকাল কার যুগের অনেক নেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাজারো আশার বাণী শোনান। আপনার মঙ্গলের জন্য অনেক কিছু করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের বক্তব্য শুনে আপনার মনে হবে আহা! এমন দরদী মনের নেতা যেন পৃথিবীর প্রতিটা ঘরে ঘরে জন্ম নেয়। আসলে আপনি, আমি, কঁচু বুঝেছি বা জেনেছি। আমাদের দেখা মঞ্চে তার যে রুপ তা পড়ে থাকা মুখোশ এর উপরের। আসল চিত্র হলো, তিনি মনে মনে বলছেন, আগে সরকারের দেয়া অনুদান হাতে পাই। তারপর সেটা থেকে নির্বাচনের সব খরচ উসুল করবো। বাদ বাকি যা থাকবে তা তোমাদের ভাগা ভাগি করে দেব। এখানে মুখোশ এর আড়ালে নেতার স্বার্থপরতা ও নগ্নতা আছে বৈকি।

এমন ভাবে আমরা এ জগৎ সংসারে প্রতিনিয়ত মানুষের উপরের রুপই দেখে আসছি। আসলে উপরে ভালো এর একই ব্যক্তির ভিতরের রুপ যে কতটা ভয়াবহ, নগ্ন এবং স্বার্থপরতায় ভরা তা কখনই ভাবি না। এটা অনেকটা মুগ্ধ হয়ে ডোরা কাটা বাঘ দেখার মত। বাঘের ভিতরের হিংস্রতা আমরা প্রকৃত পরিস্থিতিতে না পরলে বুঝতে পারি না। তবে সব ক্ষেত্রেই যে আমার লেখা মুখোশ এর আড়ালে নগ্নতাই যে থাকবে তা ও কিন্তু নই। সব ক্ষেত্রে ভালো মন্দ দুটোই আছে বলেই জগত এখনও টিকে আছে। তা না হলে প্রকৃতি তার ভারসম্য অনেক আগেই হারাত। সঙ্গত কারনেই আমি আমার লেখা বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছি, বিবেচনা বা বিচার আপনাদের উপর।

Leave a Reply