মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

মৃত্যু এবং ভালোবাসা দুটোই  অতিথি। ভালোবাসা কেড়ে নেয় মন আর মৃত্যু কেড়ে নেয় জীবন। দুটো বিষয়েই প্রচন্ড রকম মিল রয়েছে। প্রভাব বিস্তারে- দুটোই মন এবং দেহে প্রভাব বিস্তার করে। ভালোবাসা ও মৃত্যু দুটোই কিন্তু অদৃশ্য। অন্য দিকে দুটিই যথাক্রমে মন এবং জীবন কেড়ে নেয়। আবার দুটো বিষয়ে অমিলও আছে প্রচুর। আমরা যখন স্বাভাবিক ভাবে দেখি তখন মিল বা অমিল গুলোর শুধুমাত্র সাধারণ রূপই দেখি। আমরা অনেক কিছুই গভীর ভাবে ভাবি না। আসলে মন, জীবন অথবা অন্য কোন অদৃশ্য বিষয় জানার জন্য আত্মার অনুভবের গভীরতা দরকার। আমাদের সবার মধ্যেই কম বা বেশী পর্যবেক্ষণ শক্তি রয়েছে, পার্থক্য শুধু প্রয়োগে।

মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি! আমরা অনেক সময় ভাবি, আমাদের জীবনে বুঝি ভালোবাসার বড্ড অভাব। এ কথাটি কিন্তু ঠিক নই। বরং আমাদের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত ভালোবাসাতে পূর্ণ। আমার জন্ম হলো বাবা মায়ের ভালোবাসার ফসল। তারপর থেকে মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীসহ সবারই ভালোবাসা আদর স্নেহে আমি আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমরা অনেকে প্রায়ই ভাগ্য বা জন্ম নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে অনুযোগ জানাই। আসলে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ ও দয়া আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি। তা না হলে অনেক আগেই মৃত্যু এসে আপনাকে বা আমাকে আলিঙ্গন করতো। এর পরে আসে আমাদের প্রতি পরিবেশ ও প্রকৃতির ভালবাসা, সেটাও কম নই!

মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

প্রকৃতি তার পরিবেশের প্রভাব ও অপরিসীম ভালোবাসা দিয়ে আমাদের আগলে রেখেছে। আমাদের জন্য প্রকৃতি ভালোবাসা মাখা সহণীয় গরম, শীত ও বাতাসের ভারসম্য রেখেছে। তা না হলে বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমারা অনেক আগেই মারা যেতাম। প্রকৃতি, পরিবেশ বা পৃথিবী মূল চালিকা শক্তি হিসেবে সব সময় আমাদের জন্য সমতা বিধানের কাজ করে চলেছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃতির কাছে কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। প্রকৃতি সমতা বিধান বা ভারসম্য রক্ষার কাজটি স্বাভাবিক নিয়মে করছে। এ বিষয়ে আমাদের কোন স্বাক্ষী, প্রমাণ বা দলিল দাখিলের প্রয়োজন নেই। সমস্ত সৃষ্টির প্রতি প্রকৃতির ভালোবাসার এটি একটি অনুপম উদাহরণ।প্রকৃতির ভালোবাসার ভারসম্য নষ্টের জন্য সরাসরি মানুষ দায়ী, আর কেউ নই।

মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

প্রকৃতির এ অসীম অনুগ্রহকে ভালোবাসা না বলে দায়বদ্ধতা বলি কি ভাবে? আপনার আমার জন্য প্রকৃতির কিসের এত টান বা দরদ হবে, কেন বলতে পারেন! এমনি ভাবে আপনি আমি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সবদিক থেকে প্রকৃতির ভালোবাসা পেয়ে আসছি। আসল কথা হলো, জৈবিক বা মানসিক কামনা বাসনা চরিতার্থের জন্য বিপরীত লিঙ্গের যে ভালোবাসা আমাদের জন্য হয়তো সেটার অভাব। এ বিষয়ে আমি নারী পুরুষ উভয়ের কথাই বলছি। আপনাদের মত আমিও তো একই কামনা বাসনার মধ্যে আছি। সুতরাং এ অভাব আমার জন্যও সমান ভাবে প্রযোজ্য। শুধুমাত্র এ স্বার্থপরতা যুক্ত ভালোবাসাই মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে, আর এটি ভালোবাসার একটি শাখা মাত্র!

মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

নারী পুরুষের সম্পর্ক যুক্ত ভালোবাসায় সব সময় দৈহিক ও মানসিক কামনা বাসনা জড়িত থাকে। তাই তা কখনই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা হতে পারে না। খুব সামান্য হলেও এখানে স্বার্থপরতা আছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। উপরের উদাহরণ গুলো বিশেষত ভালোবাসার ক্ষেত্রে প্রমাণ করে, আমাদের জীবনে ভালোবাসা ছিল, আছে এবং থাকবে। ভালোবাসা হলো, দেহের প্রতি আত্মার ভালোবাসা। এটা থাকলে আত্মা দেহ ছেড়ে চলে যায় এবং মৃত্যু হয়। সুতরাং আমরা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ধরণের ভালোবাসার মধ্যেই আছি। ভালোবাসা কে অতিথি হিসেবে বুঝালে, সেটা ভূল হবে। বরং এটা নিয়ন্ত্রণহীন, কারণ কার ভাগ্যে কতটুকু ভালোবাসা জুটবে তা কারো পক্ষে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নই।

আমরা সব সময়ই প্রেম এবং ভালবাসাকে একই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি এটা কি আসলেই ঠিক! না, প্রেম এবং ভালোবাসা এক নই, দুটো আলাদা বিষয়। সাধারণত প্রেম শব্দটি নারী পুরুষ বা বিপরীত লিঙ্গের সম্পর্কে ব্যবহার হয়। যেখানে দৈহিক কামনা থাকে। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড বলেছেন, এ পৃথিবীতে কামহীন প্রেম বলে কিছু নেই, সব প্রেমই স্বকাম। অর্থাৎ নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা প্রেম। প্রেমে যৌবনের ক্ষুধা মেটানোর আকাংখা জড়িত থাকে। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। আবার মানুষের ভালোবাসা প্রাণীর জন্যও আছে। একই ভাবে একটা প্রাণীর মধ্যেও মানুষের জন্য ভালোবাসা থাকতে পারে যদি তা পোষা বা গৃহে পালিত হয়।

মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

অর্থাৎ পশু প্রেমী বা প্রকৃতি প্রেমী বলতে পশুর প্রতি ভালোবাসা বা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি কে বুঝায়। ভালোবাসা শব্দটির অর্থ গভীর ও বিশাল। সন্তানের জন্য মা বাবা ভাই বোন বা আত্মীয় স্বজনের এক ধরণেন ভালোবাসা আছে। তেমন ভাবে মা-বাবা বা অন্যদের বেলায়ও সন্তানের ভালোবাসা আছে। স্বামী, স্ত্রীর ভালোবাসা, প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আসলে প্রেমের প্রয়োগ খুব স্বল্প পরিসরে। আবার ভালোবাসার ক্ষেত্র অসীম। তেমন ভাবে আমরা মৃত্যু এর অর্থ বুঝি আত্মার সাথে দেহের বিচ্ছেদে। মৃত্যু, ভালোবাসা বা প্রেম এক ধরণের অদৃশ্য শক্তি যা দেখা যায় না কিন্তু ফলাফল বুঝা যায়।

প্রেম আমাদের জীবন থেকে কোন কিছুই কেড়ে নেয় না। ভালোবাসাও একই ভাবে জীবন থেকে কোন কিছু কেড়ে নিতে পারে না। ভালোবাসার অনেক দিক আছে। তার একটি হলো বৈবাহিক সম্পর্কের আগে নারী পুরুষের দৈহিক কামনাযুক্ত ভালোবাসা। প্রকৃতপক্ষে এটাকে ভালোবাসা না বলে, প্রেম বলাই শ্রেয়। আর আমরা আবেগ বশে যা বলি, ভালোবাসা কেড়ে নেয় মন, এটা সম্পুর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। এখানে হওয়া উচিত প্রেম কেড়ে নেয় মন। ভালোবাসা স্বর্গীয় এবং পবিত্র। শুধু মানুষ দিয়ে হিসেব করলে হবে না, সমগ্র সৃষ্টিকুলই এক বৃহৎ ভালোবাসার বলয়। জৈবিক সব কিছুতেই ভালোবাসা আছে না হলে জগতের সার্বিক স্থিতিশীলতা থাকতো না।

মানুষের মধ্যে যে ভালোবাসা তা আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝানোর কোন বিষয় নই। মানুষে মানুষে যতগুলো সম্পর্কের বন্ধন রয়েছে সবগুলোতেই ভালোবাসা আছে। হয়তোবা সেটা প্রচন্ড অনুভবে নতুবা অতি সামান্য। একই ভাবে তা অন্যান্য জীবকূলের মাঝেও আছে। সাধারণত তা মানুষের বোঝার সাধ্যের বাইরে। কারণ সৃষ্টিকর্তা আমাদের সব কিছু অনুভবের ক্ষমতা দেননি। বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, রেজোন্যান্ট রেকর্ডারের মাধ্যমে প্রমাণ করে গেছেন উদ্ভিদও ভালো মন্দে সাড়া দেয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে তাদের ভালোবাসা থাকাটা বরং স্বাভাবিক। আর ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র প্রাণীকূলের ভালোবাসার হাজারও চমৎকার উদাহরণ আছে। তাই আমরা সব সময় ভালোবাসার মধ্যেই আছি।

মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা সন্তান জন্ম দিয়ে ও নিয়েই তৃপ্ত। শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর ভালোবাসার যে সুনিবিড় চিত্র তা কিন্তু আমরা চিন্তা করি না! এদের মধ্যে রয়েছে পারস্পারিক ভালোবাসার প্রবল টান। শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু ভ্রুণে রুপান্তরিত হবার আগ পর্যন্ত সম্পুর্ণটাই তাদের ভালোবাসার খেলা। আমি যে কথা গুলো বলছি তার চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভিত্তি আছে বলেই বলছি। এক অর্থে ভালোবাসাই আমাদের জীবনের নিঃশ্বাস ও বিশ্বাস। আমাদের জীবন শুরুর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিবিড় ভাবে ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। তবে সে ভালবাসা অত্যন্ত গভীর এবং নর নারীর পারস্পারিক ভালোবাসার মত নই। এ ভালোবাসা বোঝার জন্য গভীর অনুধাবন শক্তির প্রয়োজন।

মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

ভালোবাসার দূরুত্ব আমাদের মাঝে কষ্ট এবং অসহায়তা সৃষ্টি করে। দূরত্বের কারণে ভালোবাসা বিলীন বা নষ্ট হয়ে যায় না। বরং অনুভূতি ও অনুভবের বন্ধনকে সুদুঢ় করে। যদি এমন হয় দূরত্বের কারণে ভালোবাসা মলিণ হয়ে গিয়েছে। তবে নিশ্চিত সেটা ভালোবাসা ছিল না, ছিল প্রেম, কামণা এবং স্বার্থপরতা। প্রকৃত ভালোবাসায় মানুষ কারও শাস্তি, মৃত্যু কামনা করে না। সব সময় কামনা করে ভালোবাসার মানুষটি যেখানেই থাকুক সব সময় সুখে ও ভালো থাকুক। দূর থেকে কাউকে না দেখে, শুধু কথা শুনে প্রচন্ড ভালোবাসতে পারা একটা বিশেষ ক্ষমতা। যা সচরাচর সবার মধ্যে থাকে না এবং এমন ভালোবাসা এক ধরণের পবিত্র ভালোবাসা। এমন ভালোবাসা শ্রদ্ধার যোগ্য।

মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!

কোন বিশেষ ধরণের স্বার্থযুক্ত প্রেম এবং মৃত্যু দুটোই যথাক্রমে মন এবং জীবন নিয়ে গেলেও। প্রেম আমাদের হৃদয়ে কিছুটা সময় ভাব বা মন নিয়ে খেলা করে, সে অর্থে প্রেম অতিথি। কিন্তু মৃত্যু বিধাতার নির্ধারিত সময়েই আসে। না ন্যানো বা মাইক্রো সেকেন্ড আগে অথবা পরে। মৃত্যুর, দেহে বা হৃদয়ে অবস্থান করে অতিথি সাজার কোন সুযোগই বিধাতা রাখেননি। তাই মৃত্যু তো মৃত্যুই এবং কোন ক্রমেই অতিথি নই। শুধুমাত্র কেড়ে নেয়াতে ভালোবাসা ও মৃত্যু সম্পর্কযুক্ত।

2 thoughts on “মৃত্যু এবং ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণহীন, কেড়ে নেয় জীবন ও মন!”

    • ধন্যবাদ আপনাকে, মুল্যবান এবং অর্হবহ মন্তব্যের জন্য।

      Reply

Leave a Reply