ঘুষ দিতে বাধ্য করা এবং ঘুষ নেয়া একটি সামাজিক ব্যাধি!

ঘুষ দিতে বাধ্য করা এবং ঘুষ নেয়া একটি বড় সমস্যা।

ঘুষ দেয়া এবং ঘুষ নেয়া একটি সামাজিক ব্যাধি। লোভ ও সীমাহীন চাহিদার কারণে আমরা এ অনৈতিক লেন-দেন করে থাকি। এর ফলে বড় বড় অপরাধ প্রশ্রয় পায় এবং নতুন অপরাধ সৃষ্টির পথ সুগম হয়। বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়ার ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং আর্থ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ঘুষ বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা এবং মানুষের জীবনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জটিলতার কারণ। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বর্তমানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয়। নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি এবং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ঘুষখোড়রা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়। একই সাথে ভোগান্তির স্বীকার হয় সাধারণ জনগণ। ঘুষ দুর্ণীতির কারণে দেশের অভ্যন্তরের সার্বিক কর্মকান্ড বাঁধাগ্রস্থ হয়।

ঘুষ দিতে বাধ্য করা এবং ঘুষ নেয়া একটি বড় সমস্যা।

ঘুষ অনেকের আর্থিক ক্ষতি করে। এমন অনৈতিক অর্থ গ্রহণ ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর জন্য অর্থ জোগান দিতে গিয়ে অনেককে সর্বস্ব বিক্রি করতে হয়। এই ঘৃণিত কাজের জন্য আমাদের লোভ এবং অতিরিক্ত চাহিদা দায়ী। কাজেই এ দুটি খারাপ অভ্যাসকে বাদ দিলে আমরা অনায়সে ঘুষখোর অপবাদ মুক্ত হতে পারি। এ জন্য সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে স্বচ্ছ ভাবে কাজ করতে হবে। নিজের এবং পরিবারের সার্বিক চাহিদা সব সময়, উপার্জন বা আয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। লোভকে নিয়ন্ত্রণ করে সাধ এবং সাধ্যের সমতা বিধান করতে হবে। নিজে সংশোধিত হলে তবেই বুকে হাত দিয়ে, আমি ঘুষ খাই না, কথাটি বলার সৎ সাহস হবে।

ঘুষ দিতে বাধ্য করা এবং ঘুষ নেয়া একটি বড় সমস্যা।

পরিবারের সাথে ঈদ অথবা পূজা উৎযাপনের জন্য আমরা কয়েক দিন আগে বাড়ী যাই। এ জন্য বাস বা ট্রেনের টিকেট কাটতে গেলে শুনি, টিকেট নাই, সব বিক্রি হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সত্য উত্তর থাকে খুবই কম। এখানে আমাদের সুক্ষ্ম ভাবে ঘুষ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এখন কাউন্টারে বসা লোকটির হাতে দুইশত টাকা গুঁজে দিলে, সে কিন্তু ঠিকই টিকেটের ব্যবস্থা করে দেবে। আবার টিকেটের দাম যদি হয় পাঁচশত টাকা। কাউন্টারের বসা লোকটি বলবে, টিকেট আছে তবে, প্রতি টিকেটের দাম আটশত টাকা। আপনি দামে রাজী হলে, সাথে সাথেই টিকেটের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। পরিস্থিতি জটিল করে, এই অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এটাই অনৈতিক লেনদেন।

ঘুষ দিতে বাধ্য করা এবং ঘুষ নেয়া একটি বড় সমস্যা।

কোন অফিসের একটি নির্দিষ্ট কাগজ আপনার কাজের জন্য খুবই প্রয়োজন। যে কাগজটি বিনা অর্থ ব্যয়ে আপনি চাইলে, সাথে সাথেই দেয়ার কথা। অথচ সেই অফিসের পিয়ন বলছে, স্যার আজ ব্যস্ত আছেন। আপনার কাজ আজ হবে না, পাঁচ দিন পরে আসবেন। কিন্তু কাগজটি আপনার আজই জরুরী দরকার। এখানেও সুক্ষ্মভাবে আপনাকে ঘুষ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। উপায় নাই তাই, বাধ্য হয়ে আপনি পিয়নটির হাতে পাঁচশত টাকার একটি নোট গুজে দিলেন। বললেন, ভাই কাগজটি আমার আজই দরকার, একটু ব্যবস্থা করো! পিয়নটি কিন্তু এবার ভোল পাল্টালো। তার উত্তর, বসেন, দেখি কি করা যায়। অব্যাক ব্যাপার! কিছুক্ষণ পর সে কাংখিত কাগজটি আপনার হাতে তুলে দিলো।

একই ভাবে বিল পাশ, শালিশের মিমাংসা, লাইসেন্স ও সার্টিফিকেট দেয়া ইত্যাদিতে অর্থ দন্ড দিতে বাধ্য করা হয়। কোম্পানী খোলা, চাকুরী দেয়া, বিল্ডিং তৈরীর অবৈধ অনুমোদন ইত্যাদি হাজারো কাজে অবৈধ ঘুষ নেয়া হয়। অবাক হয়ে হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে বড়কর্তারা করছেন কি? এসব কি তাদের চোখে পড়ে না? হাঁ, নিশ্চয় চোখে পড়ে, তবে খামের ভিতরের অর্থের কারণে তারা এখানে নীরব। অবৈধ অর্থের বেশ মোটা একটা অংশ তারা নিয়মিত পান। তাই নিজের স্বার্থের কারণে তারা কিছুই বলবেন না। বরং প্রতিবাদ করলে উল্টো আপনিই নাজেহাল হবেন, বিপদে পড়বেন। সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এমন ঘুষখোরদের শায়েস্তা করা, দেশের শাসন ব্যবস্থার পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার!

এখানেই শেষ নই! বিভিন্ন সংস্থার সাধারণ কর্মচারীর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবার অনেক নজির ইতিহাসে আছে। যেমন ভূমি, কাস্টমস্, বন, মান নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। ভাবতে পারেন, এসব সংস্থার বড় হতে নগণ্য কর্মচারীরা ঘুষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ ভাবে পাহাড় সমান সম্পদ গড়ে তোলে। তাই একক ভাবে শুধুমাত্র তাদের সমুচিত শিক্ষা বা শাস্তি দেয়াই যথেষ্ট নই। আমাদের নৈতিক চরিত্রকে আগে ঠিক করতে হবে।ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাহীন চাহিদা, লোভ ও স্বার্থপরতা পরিহার করতে হবে। তবেই ঘুষ দেয়া, নেয়া এবং ঘুষখোর শব্দের অবলুপ্তি ঘটবে। আমাদের মনে রাখা উচিত, অসৎ পথে আয়, অসৎ পথেই যায়!

Leave a Reply