বেশী সুবিধা চাওয়া, লোভ এবং স্বার্থপরতার অন্য রূপ!


বেশী সুবিধা চাওয়া, লোভ এবং স্বার্থপরতার অন্য রূপ!

বেশী সুবিধা পাওয়ার আকাংখা একজন মানুষের ভিতরের লোভকে নির্দেশ করে। ধরুন, দশ জন লোক দশটি খাবারের প্যাকেট নিয়ে বসে আছেন। তাদের মধ্যে আমিও আছি। আমার মনোভাব এমন, নিজের খাবারের প্যাকেট তো চাইই। অন্যদের খাবারের প্যাকেট দেখে তাও নিতে ইচ্ছে করছে। মানে, এটা দাও, সেটা দাও, গিভ মি অল, জাতীয় মনোভাব। নিজের কাজের বিনিময়ে যা পাবো তা নিয়েই আমাদের সন্তুুষ্ট থাকা উচিত। এ জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আবশ্যক। বাস্তবে আমাদের চাহিদা এবং আকাংখা অনেক উচ্চে। এর ক্ষতিকর দিক বেশী ভাগ সময়ই অন্যদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বেশী ভালো, অনেক প্রাপ্তি, বা সীমাহীন চাহিদা অশুদ্ধ আত্মার পরিচয় বহন করে।

বেশী সুবিধা চাওয়া, লোভ এবং স্বার্থপরতার অন্য রূপ!

যার আত্মা পরিস্কার নই তার প্রার্থনা বা ইবাদত সৃষ্টিকর্তার নিকট কতটা গ্রহণযোগ্য তা আমাদের অজানা। যেখানে ধর্মীয় কার্যকলাপ মানুষের নিকটই প্রশ্নবিদ্ধ। সেখানে তা, সৃষ্টিকর্তা কিভাবে মুল্যায়ন করবেন, আমরা আদৌ জানি না। অনেকেই এ কথার বিপক্ষে হয়তো তৎক্ষনাৎ যুক্তি খাড়া করবেন। বলে বসবেন, দাঁড়ি পাল্লার মত একদিকে পাপ এবং অন্য দিকে পুণ্যের হিসেব হবে। যার পাপের চেয়ে পুণ্য বেশী। তার স্বর্গে যাবার সম্ভভাবনা খুবই বেশী। আমার মনে হয় এটা একটা অযৌক্তক ব্যাখ্যা। বেশী সুবিধা পাবার আশা এবং পাপকে সম্পুর্ণ রুপে বর্জন করে নিজে সংশোধিত হলে তবেই এমন আশা করা যায়। পক্ষপাতিত্ব করে পরকালে বা পরজন্মে সুন্দর জীবন প্রাপ্তির আশা বৃথা।

বেশী সুবিধা চাওয়া, লোভ এবং স্বার্থপরতার অন্য রূপ!

ধরুন, দুজন সহকর্মী এক সাথে একটি কোম্পাণীতে কাজ করেচ। একজন নীতিবান এবং ধর্মীয় কাজের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান। সে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথা সময়ে শেষ করে। অপর সহকর্মীটি বেশী সুবিধাবাদী। সে কাজের নির্ধারিত সময়ের কিছু অংশ ধর্মীয় কর্তব্য পালনের অজুহাতে ব্যয় করে। অর্থাৎ কাজের জন্য নির্ধারিত ছয় ঘন্টার মধ্যে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ইবাদতের অজুহাতে ব্যয় করছে। খাবার এবং বিশ্রামের সময় তো আছেই! আবার একই ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে কোন না কোন অজুহাতে কর্তব্যে ফাঁকি দিয়ে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণ করছে। প্রশ্ন হলো, এই কর্তব্যে ফাঁকিবাজ সহকর্মীর দিন রাত সমান করে ইবাদত করা কতটা সঠিক! এখানেও কি দাঁড়ি পাল্লাতে পাপ পণ্যের হিসেব হবে?

সব ধর্মেই কর্তব্যকে সব চেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তা হলে বর্ণিত সহকর্মীর ধর্মীয় কাজ কতটুকু বৈধ! এখানে এ ব্যক্তির অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা তাকে লোভী, স্বার্থপর এবং ফাঁকিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করছে। ফাঁকিবাজ কারণ সে অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। তারপরও যদি সে অন্যের সাথে তুলনার্থে, কম সুবিধা পায় বা অনেক পরিশ্রম করে, এমন কথা বলে! এটা কি আদৌ যৌক্তিক? তার ভিতরে কি বেশী সুবিধা পাবার আকাংখা এবং লোভ কাজ করছে না? এটাই কি স্বার্থপরতা নই! আমার ক্ষুদ্র ও সীমিত জ্ঞান থেকে মনে হয় উপরের উদাহরণ দুটি লোভ এবং স্বার্থপরতাকে নির্দেশ করে।

সব চেয়ে বড় বিষয় হলো, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে ধর্মীয় আচার আচরণ বা বিধান পালনে আত্মার স্বচ্ছতা একান্ত প্রয়োজন। নিজেকে নিজে বিচার করতে হবে। সমবন্টন বা সাম্যবাদকে বিচারের মাপকাঠি হিসেবে নিতে হবে। অন্যের তুলনায় বেশী সুবিধা নেয়ার ছোট মানসিকতা পরিহার করতে হবে। যথা সম্ভব লোভ এবং স্বার্থপর মানসিকতা পরিহার আবশ্যক। মানুষ হিসেবে সমতা বিধানের চেষ্টাকে বেশী প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখবেন, পাপ এবং পূণ্য এক সাথে চলার জন্য নই। একই সাথে লোভী এবং স্বার্থপর মন মানসিকতা আমাদের সবারই বর্জন অপরিহার্য।

Leave a Reply