নিশ্চুপ হয়ে, আপনি নিজেকে কি সঠিক প্রমাণ করতে পারবেন!

নিশ্চুপ হয়ে, আপনি নিজেকে কি সঠিক প্রমাণ করতে পারবেন!

নিশ্চুপ হয়ে আমরা অনেকেই নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে চাই! যা সব সময় ভাল ফল বয়ে আনে না। কারণ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তা দুর্বলতা এবং অক্ষমতা প্রকাশ করে। যেখানে নিশ্চুপ থাকার প্রয়োজন, সেখানে নিশ্চুপ থাকতে হবে, সব ক্ষেত্রে নই। মারাত্মক কোন কিছু ঘটে যাবার পর আমরা বলি, দেশে আইন আছে না! আমরা সব দায়বদ্ধতা আইনের হাতে ছেড়ে দিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চাই। প্রতিকারের চেয়ে যে প্রতিরোধ উত্তম আমরা তা করে দেখাতে পারি না। দায়িত্ব এড়িয়ে চলার প্রবণতা কম বেশী সবার মধ্যেই আছে। তাই বলে খারাপ কোন কিছু ঘটতে পারে, এমন পথ খোলা রাখা ঠিক না।

নিশ্চুপ হয়ে, আপনি নিজেকে কি সঠিক প্রমাণ করতে পারবেন!

ব্যক্তি বিশেষে আমরা সবাই আইন কানুন বা নিয়মের প্রতি যথা সম্ভব শ্রদ্ধাশীল। নিজেকে, পরিবার পরিজন বা প্রিয় মানুষগুলোকে রক্ষা করার মত ক্ষমতা আমাদের সবারই আছে। আমি এ ক্ষেত্রে গায়ে পরে কারও সাথে ঝগড়া বাঁধানো বা মারামারি করার কথা বলছি না। বরং নিজের প্রতিরক্ষার দিকেই ইঙ্গিত করছি। অনেকেই প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি কোন ঘটনাকে এর সাথে যোগ করতে চাইবেন। সব ক্ষেত্রেই নিজের স্বক্ষমতার প্রয়োজন আছে বৈকি। মোট কথা নিশ্চুপ নই, যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করার সাহস আপনার থাকতে হবে। একটি বিশেষ সীমা পর্যন্ত আপনি প্রতিবাদী মনোভাবকে ধরে রাখলে অনেক উটকো ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন।

নিশ্চুপ হয়ে, আপনি নিজেকে কি সঠিক প্রমাণ করতে পারবেন!

নীরবতার একটি অন্য রকম ভাষা আছে। এটা আপনি আমি সবাই কম বেশী জানি। তবে সব ক্ষেত্রেই কিন্তু নীরব বা নিশ্চুপ থাকা ঠিক নই। পরিবারের কর্তা ব্যক্তি আমার কোন একটা ভুলের জন্য বকাঝকা করছেন। এখানে আমি নীরবতা অবলম্বন করছি। এখানে চারটি বিষয় প্রাধান্য পায়। এক, আমি খুবই ভদ্র এবং গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দুই, আমি নীরব থেকে অনাহুত ঝামেলা এড়িয়ে চলছি। তিন, আমি আত্মপক্ষ সমর্থন বা জবাবদিহিতার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছি। চার, আমি ব্যক্তিগত ভাবে অপরাধী তাই নীরব থেকে দোষ স্বীকার করছি। এটা একটা পরিবারের ভিতরের চিত্র। যেখানে নিশ্চুপ থাকার চারটি অর্থ আছে।

নিশ্চুপ হয়ে, আপনি নিজেকে কি সঠিক প্রমাণ করতে পারবেন!

একটা বিষয় প্রথমেই স্পষ্ট হওয়া উচিত। তা হলো, হত্যার বদলে হত্যার ঘটনা কোন মানুষের কাজ নই। এটা পাশবিকতা এবং মানুষরূপী পশুর দ্বারাই এটা সম্ভব। সুতরাং এমন কাজে কোন ভাবেই আমাদের সায় দেয়া উচিত নই। পরিবারের বাইরে সাধারণত কথার দ্বারা, শারিরীক বা কৌশলে করা আক্রমণগুলো দুর্বলদের উপরই করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করে শত্রুতার জের ধরেও আক্রমণ হয়। যেমন বাইরে কেউ আপনাকে অন্যায় ভাবে শারিরীক দিক থেকে অপমান করলো। সেখানে আপনি মার খেয়ে নীরব আছেন, এর অর্থ আপনি আসলেই অপরাধী। তাই এ রকম আচরণ আপনার প্রাপ্য। দুই, আপনি অবস্থার কারণে এ রকম অন্যায়ের প্রতিবাদে অক্ষম।

নিশ্চুপ হয়ে, আপনি নিজেকে কি সঠিক প্রমাণ করতে পারবেন!

তিন, আপনার মধ্যের ভদ্রতা বলছে, কুকুরের কাজ কুকুর করেছে। এটা ভেবে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করা থেকে দূরে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে যদি আপনি বা আপনার সহযোগীরা প্রতিবাদ করে বসে। তবে অন্যায়কারী বা অপরাধকারী কোনঠাঁসা হয়ে পরে। এ ক্ষেত্রে তার, ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি, এর মত অবস্থা হবে। সুতরাং এখন বিবেচনা আপনার উপর নিশ্চুপ থেকে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করবেন না পড়ে পড়ে মার খাবেন। কিছু কিছু সামাজিক, পারিবারিক বা একান্ত ব্যক্তিগত আক্রমনের বিষয়ে প্রতিবাদের ভাষা হিসেব নীরব থাকাই উত্তম। তবে সেটা সম্পুর্ণ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। আসলে পরিস্থিতিই বলে দেয় আপনাকে কেউ আক্রমন করলে নিশ্চুপ থাকবেন না প্রতিবাদ করবেন।

নিশ্চুপ হয়ে, আপনি নিজেকে কি সঠিক প্রমাণ করতে পারবেন!

নিশ্চুপ থেকে নই, সঠিক পথে থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা উচিত। এ জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রতিবাদী হতে হবে। কোন একটা বিষয়ে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে। এখানে আপনার মান সম্মান, ভবিষ্যত বা জীবন মরণের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে কোন ভাবেই আপনার নীরবতা দেখানো ঠিক হবে না। বরং কৌশল অবলম্বন করে সব ধরণের সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অনেক সময়ই আমরা ভুল করি। আর সেই ভুল কেউ ধরে বকা দেন, এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। এতে আপনি নিশ্চুপ থাকলে একাধারে বিনয়তা ও ভুল স্বীকার করে নম্রতা প্রকাশ পায়। এমন পরিস্থিতিতে আপনার এমন আচরণকে সবাই ভালো বলবে।

জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। ধরুন, কোন এক হত্যার দায়ে আপনার নামে অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতে আপনাকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। এখানে আপনি কি নিশ্চুপ থেকে হত্যার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলবেন! নিশ্চয় সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এ ক্ষেত্রে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য অবশ্যই আপনাকে কথা বলতে হবে, নিশ্চুপ থাকা নই। এমন অনেক বাস্তব উদাহরণ আছে যেখানে নিশ্চুপ থাকা অর্থ নিজের অথবা অন্য কারো মহা সর্বনাশ। অতএব নির্দোষ প্রমাণের সব সময় নিজের নিশ্চুপ থাকতে নেই। এমন পরিস্থিতিতে নিশ্চুপ থাকলে হিতে বিপরীত হয়।

নিশ্চুপ হয়ে, আপনি নিজেকে কি সঠিক প্রমাণ করতে পারবেন!

অন্যায়, অবিচার বা নির্যাতনে সৃষ্টিকর্তা অথবা প্রকৃতির একটা বিচার আছে। কেউ আমাকে ভুল বুঝে কোন ক্ষেত্রে দোষী ধরে নিল। সৃষ্টিকর্তার বিচারের জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। একদিন প্রমাণ হবে আমি দোষী নই। এমন ক্ষেত্রে এক সময় আমি যে নির্দোষ তা প্রমাণ হয়ে যায়। তবে তা অধিকাংশ সময় খুব দেরীতে। সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতির এ নির্দোষ প্রমাণের পদ্ধতি জীবনের ছোট খাট বিষয়ে মেনে চলা সহজ। কিন্তু জটিল পরিস্থিতিতে নই। অনেক সময় মনের মধ্যে অনেক বিষয়ে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তখন আমরা কেউ কেউ নিয়তির এ বিচার পদ্ধতি মেনে নিই বা মেনে নিতে বাধ্য হই।

আমরা নিজের অবস্থানে সব সময় বিপরীত চাপের মধ্যে থাকি। আমাদের ক্ষমতা থাকলে সবাই নিজেকে যে কোন দোষে অবশ্যই নির্দোষ প্রমাণ করতাম। যেহেতু ক্ষমতা নেই তাই নিজের নির্দোষ প্রমাণের ভার বিধাতার হাতে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকি। সহজ কথায় এই নিশ্চুপ থাকাটা হলো আমাদের ব্যর্থতা। অথবা বলা যেতে পারে অক্ষমতা। যা হোক না কেন, নিশ্চুপ থাকাটা আসলে জীবনে ভালো কোন কিছু বয়ে আনে না। শুনেছি আইন নাকি দুর্বলকে রক্ষা করার জন্য অর্থাৎ দুর্বলের জন্য আইন। তাই ব্যর্থতা বা দুর্বলতায় আইনের সাহায্য নেয়া উত্তম। তবে এ পদ্ধতি মনোগত বিষয়ে কোন কাজ দেবে না বরং নিশ্চুপ থাকলেই ভালো হবে।

বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে আপনি যদি সঠিক হন তবে তা প্রমাণ করা খুবই জরুরী। তা না হলে নিজের জীবনই বিপন্ন হতে পারে। অথবা আপনি নির্দোষ তা প্রমাণ করতে না পারলে অন্য কোন ব্যক্তি বা সমাজের বিরাট ক্ষতি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আদালত একটি ভালো উদাহরণ। আমি প্রকৃতির দ্বারা প্রমাণের জন্য, সময়ের সঠিক জবাবের জন্য অপেক্ষা করে হয়তো ন্যায় বিচার পেতে পারি। কিন্তু ততোক্ষণে যা অপুরণীয় ক্ষতি হবার তা হয়ে যাবে। আর সময় কিন্তু তার নিজস্ব গতিতে সঠিক এবং সত্যতার প্রমাণ করে দেয়। এখন সব বিবেচনার ভার আপনার উপর। নিজেই ঠিক করুন নিশ্চুপ থেকে না প্রতিবাদী হয়ে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করবেন।

আলোকপাত বা আলোচনায় অনেক বিষয়ই এসেছে। তবে মুল কথা হলো নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সব ক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকা ঠিক না। নিজের সত্যতা প্রমাণে সব সময় স্পষ্টবাদী হওয়া উচিত। প্রয়োজনে নিজের স্বচ্ছতা প্রমানের জন্য তথ্য সংগ্রহে বা হাসিলে ছল, বল ও কৌশল প্রয়োগ করুন। মনে রাখবেন নীরবতা সব সময়ই যে আপনার আমার জন্য সুফল বয়ে আনবে এমন কোন সূত্র বা যুক্তি আদৌ নেই। সব সময়ই আপনার প্রমাণ, প্রতিবাদ, স্বচ্ছতা ও বাঁচার চেষ্টা আপনাকেই করতে হবে।

Leave a Reply