আমি খারাপ, পিছনে সবাই বলে! এ জন্যই আমার গর্ব হয়!

আমি খারাপ, পিছনে সবাই বলে! এ জন্যই আমার গর্ব হয়!

আমি খারাপ! আর এ জন্যই আমি গর্ববোধ করি। এ কথাটি হতে পারে বর্তমান কালের একজন ভালো মানুষের মুখের কথা। কারণ আপনার বা আমার মত হাজারো খারাপ মানুষের ভীড়ে এমন লোক বর্তমান সমাজে একেবারেই বেমানান ও সকলের শত্রু। এখানে চোখে পরার মত কিছু বিষয় তো অবশ্যই আছে। যেমন বর্তমান সমাজে আমরা প্রায় সবাই স্বার্থপর মানসিকতার। তাই আমরা এ ভালো মানুষটির কোন সঠিক কাজ হাসি মুখে মেনে নিবো না। তাকে এবং তার কর্মকান্ড, কথা বার্তা, চাল চলন উল্টো আমাদের কাছে খারাপ মনে হবে। সে ভালো হলেও আমরা সবাই তাকে অবশ্যই খারাপ বলবো। এতে কোন দ্বিমত নেই।

আমি খারাপ, পিছনে সবাই বলে! এ জন্যই আমার গর্ব হয়!

কেউ ন্যায় নীতি ও কর্মকান্ডে প্রকৃত ভালো হলেও আমরা তাকে খারাপ বলবো। এ সমাজ তার ভালো কাজের স্বীকৃতি খুব কমই দেবে। তিনি তখনই ভালো হবেন যখন আমরা ভালো বলবো। তিনি যদি আমাদের মত স্বার্থপর মানুুুষের মন রক্ষা করেন তবেই সে ভালো! তার এবং আমাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমি নিজের স্বার্থের জন্য কারো প্রতি অন্যায় অবিচার করি, তিনি এ অন্যায় অবিচারে কষ্ট পান এবং প্রতিবাদ করেন। আমি কাউকে কষ্ট দিয়ে সুখ পাই তিনি ভালোবেসে সুখী। আমি যেখানে কারো তোষামোদ করি তিনি হয়তো সেখানে স্পষ্টবাদী। আমি নিজের স্বার্থ ও ভোগের চিন্তাই বেশী করি। তিনি অন্যের জন্য কিছু ত্যাগ করে সুখী।

আমি খারাপ, পিছনে সবাই বলে! এ জন্যই আমার গর্ব হয়!

অন্যায়, অবিচার, অনিয়মকে প্রশয় দেয়া আমাদের কর্ম নই। বরং ন্যায় বিচার, সততা ও শৃঙ্খলাবোধ হবে একজন ভালো মানুষের ধর্ম। আমি সবার সাথে তালে তাল মিলিয়ে তালি দিতে পছন্দ করি। সৎ ব্যক্তি মুখের উপর উচিত কথা বলেন। আমি সব সময় সুযোগ সন্ধানী এবং অন্যের ক্ষতি করার চিন্তায় ব্যস্ত। কিন্তু একজন ভালো মানুষ সর্বদাই পরোপকারী এবং অন্যের মঙ্গল কামনা করেন। ঠিক এমন হাজারো পার্থক্য একজন ভালো এবং খারাপ মানুষের মধ্যে আছে। তাই তিনি আমাদের কাছে খারাপ হবেন সেটাই স্বাভাবিক। যেহেতু তিনি খারাপ তাই তিনি নিজেকে এ সমাজে ভালো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না। এ কারণেই সমাজের সবাই তাকে খারাপ ভাবে।

আমি খারাপ, পিছনে সবাই বলে! এ জন্যই আমার গর্ব হয়!

বর্তমানে আপনি আমি নিজের সামান্য স্বার্থের জন্য কারো বড় ক্ষতি করতে একটুও দ্বিধাবোধ করি না। কিন্তু একজন ভালো মানুষের মানবিক বিবেচনাবোধ সব সময় সব কাজে তাকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেয়। তাই তিনি আপনার আমার কাছে সঠিক মুল্য পান না। তবে তিনি যে তার আত্মার কাছে স্বচ্ছ এটা নিশ্চিত। আপনি, আমি যদি ভালো মানুষের ভালো বৈশিষ্টের কিছুটা ধারণ করি। তাহলে সমাজের সামাজিক চিত্র বা প্রেক্ষাপট অনেকটা পাল্টে যাবে। একজন ভালো মানুষ তিনি সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে সব সময়ই অন্যের চেয়ে নীচু অবস্থানে আছেন। এর বড় কারণ হলো তিনি লোভ না করে নিজের যা অল্প আছে সেটা নিয়ে খুশি থাকেন।

চারদিক থেকে খারাপ লোকের নির্যাতন এবং অত্যাচারে ভালো মানুষদের জীবন কষ্টে কাটে। বর্তমানে সব দিক থেকে তারা চরম অবহেলিত। ভালো মানুষ তোষামোদ করতে পারে না, তাই তারা সবার কাছে ঘৃণিত। তারপরও সমাজে এ শ্রেণীর মানুষ আছে বলেই সমাজটা আজও সুন্দর। সমাজ, দেশ বা জগত সর্বত্রই ভালো মন্দ থাকার দুটোই থাকার দরকার আছে। তা না হলে খারাপ আর ভালোর পার্থক্য বের করা সম্ভব হতো না। ফলে ভবিষ্যত প্রজন্মের মানুষগুলো ভালো অথবা মন্দ যে কোন একটা কে সঠিক ধরে নিত। আমি আপনি যদি ভালো মানুষদের দেখে অন্ততপক্ষে নিজেদের একটু সংশোধন করি তবেই সবার মঙ্গল হবে। ঠিক এইখানটাতেই ভালো মানুষের জীবনের স্বার্থকতা।

একজন ভালো মানুষ বা নৈতিক চরিত্রের মানুষ তৈরীর পিছনে তার পরিবার এবং পরিবারের শিক্ষাই হলো মুল চালিকা শক্তি। তাই একান্ত ভাবেই সাধুবাদ প্রাপ্য সেই সব গর্বিত বাবা মার যারা একজন ভালো মানুষের জন্ম দিয়েছেন। ভালো মানুষকে যদি সবাই খারাপও বলে, তারপরও তারা তাদের অনুপম চরিত্রের জন্য গর্ববোধ করবে এটাই স্বাভাবিক। এতে আমি বা আপনি কে কি ভাবছি এ নিয়ে তারা মোটেই বিচলিত নন!

Leave a Reply